মাতৃত্ব প্রতিটি নারীর কাছে পরম আনন্দের একটি বিষয়। যেদিন থেকে একজন নারী জানতে পারে সে মা হতে চলেছে সেদিন থেকে তার কাছে এর চেয়ে বেশি সুখের অনুভূতি আর কিছু হয়না। সকল হবু মায়েদের চাওয়া থাকে, তার গর্ভের সন্তান যেন সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে এবং কোন ঝুকি ছাড়াই যেন তার সন্তান পৃথিবীর আলো দেখে।
কিন্তু অধিকাংশ হবু মায়েরা জানে না গর্ভাবস্থায় কোন খাবার কতটুকু গ্রহন করতে হবে এবং কিভাবে গ্রহন করলে পুষ্টি চাহিদা পরিপূর্ন হবে। যার ফলে তারা অপুষ্টির স্বীকার হয় এবং অপুষ্ট সন্তানের জন্ম দেয়।
গর্ভাবস্থায় পুষ্টি নিয়ে ভুল ধারনাঃ
আমাদের সমাজে দু ধরনের ধারনা প্রচলিত আছে,
একটি হল, অনেকে মনে করেন গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের দ্বিগুন খাবার খেতে হবে। এই ধারনা থেকে অনেক মায়েরা দ্বিগুন খেয়ে থাকেন যার ফলে দেখা যায় মায়ের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে,৭ মাসের সময় ডায়াবেটিস দেখা দিয়েছে কিংবা উচ্চরক্তচাপের সমস্যা ও দেখা যায়। এসব সমস্যার কারনে সিজারিয়ান অপারেশনের হার বাড়ছে।
আবার অপর ধারনাটি হল,
কারো কারো মতে গর্ভাবস্থায় বেশি খাওয়া উচিত নয় বা বেছে খাওয়া উচিত। একারনে গর্ভবতী মায়েরা অনেক পুষ্টিকর খাবার গ্রহন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ফলস্বরূপ তারা অপুষ্টির স্বীকার হচ্ছে, আয়রন ঘাটতি দেখা দিচ্ছে,দূর্বলতা দেখা দিচ্ছে এবং শেষে একটি অপুষ্ট শিশুর জন্ম দিচ্ছে।
পুষ্টিবিদদের মতামতঃ
পুষ্টিবিদদের মতে, উপরের দুটো ধারনার কোনটাই সঠিক নয়। গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসে প্রতিদিন ১০ কিলোক্যালরি,, ২য় ৩ মাসে ৯০ কিলোক্যালরি এবং শেষ তিন মাসে ১৫০-২০০ কিলোক্যালরি অতিরিক্ত গ্রহন করা উচিত।
যাদের ধারনা গর্ভাবস্থায় দ্বিগুন খেতে হয় সেই হিসেবে, স্বাভাবিক অবস্থায় যদি ১৭০০ কিলোক্যালরি গ্রহন করা হয় তবে গর্ভাবস্থায় তা হবে ৩৪০০ কিলোক্যালরি, যা অস্বাভাবিক।
এমতাবস্থায় খাবার গ্রহনের সঠিক নিয়ম সকল গর্ভবতী মায়েদের জানা থাকা উচিত।
গর্ভবতী মায়েদের একটি খাদ্যতালিকা হল-
• বাড়তি চাহিদা পুরনের জন্য প্রতিদিন এর চাহিদার সাথে ৫০ গ্রাম অতিরিক্ত শস্য ( ভাত,রুটি,আলু )
• ৫ গ্রাম অতিরিক্ত তেল
• ৬৫ গ্রাম অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ( মাছ,মাংস,ডিম,দুধ,শিমের বিচি )
• ৩৮ মিলি গ্রাম আয়রন ( মাছ, মাংস,লাল শাক, কচু শাক,ডুমুর,খেজুর )
• ১-৫ গ্রাম সোডিয়াম ( লবন, পনির,লবনজাত খাবার)
• ১২৫ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিন ( সামুদ্রিক মাছ,আয়োডিন লবন)
• ২০ মিলি গ্রাম জিংক ( দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার,সবুজ শাক, কাটা সহ মাছ, সয়াবিন, বাদাম ) প্রয়োজন।
#এছাড়া, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য ও অজীর্নতা প্রতিরোধে শাক শব্জির পরিমান বাড়ানো উচিত।
#গর্ভবতী মায়েদের জরায়ুতে রসের পরিমান স্বভাবতই বৃদ্ধি পায় যার কারনে প্রচুর পরিমান বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত।
#গর্ভাবস্থায় বাড়তি পুষ্টির জন্য বাদাম (৪৫-৫০ গ্রাম),, গুড় (২০-৩০ গ্রাম),, ১/২ কাপ রান্না করা শাক সবজি এবং এর সাথে প্রতদিন একটি করে মৌসুমি ফল এবং সপ্তাহে ৩/৪ টি ডিম গ্রহন করলে পুষ্টি পরিপূর্ন হয়।
সবশেষে, সকল হবু মায়ের মনে রাখতে হবে,
” সুস্থ মা মানেই সুস্থ শিশু ”
তাই নিজের অনাগত সন্তানের সুস্থতার কথা চিন্তা করুন, পরিপূর্ণ পুষ্টি সেবায় নিকটস্থ পুষ্টিবিদের সহায়তা নিন এবং সুস্থ থাকুন সবসময়।
লেখক-
আয়েশা সিদ্দিকা সুরভী
খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান
4,326 total views, 2 views today
Any opinion ..?