আমাদের পরিচিত হরেক প্রকার মসলার মধ্যে কালোজিরা (Nigella seed) অন্যতম। এর বৈজ্ঞানিক নাম Nigella sativa.আমরা কমবেশি সবাই এর উপকারিতা নিয়ে জানি। কিন্তু জানার মাঝেও অজানা কিছু থাকতে পারে। তাই কালোজিরা আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ জানানোর লক্ষ্যেই নিচে কালজিরার উপাদান এবং উপকারী দিকগুলো আলোচনা করা হল।
উপাদানঃ
কালো বর্ণের ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত, কিছুটা তেতো এই মসলাটি আকারে খুব ছোট হলেও এতে রয়েছে উপকারি কিছু পুষ্টি উপাদানের সমন্বয়। এতে লিনোলেইক এসিড, অলেইক এসিড, পামিটিক এসিড রয়েছে যেগুলো উপকারি ফ্যাটি এসিড।
এছাড়া কালোজিরাতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি ইত্যাদি।

কালোজিরা ও এর ফুল
বিভিন্ন খনিজ উপাদান যেমন:- ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদিতেও সমৃদ্ধ কালোজিরা।
এতে ৪০ গ্রাম খাদ্যাঁশ রয়েছে। ১০ গ্রাম কালোজিরাতে ৩৪.৫ ক্যালরি পাওয়া যায়। এতো জানা গেল কালোজিরার বিভিন্ন উপাদনের নাম। এসকল উপাদনে সমন্বয় কালোজিরাকে করে তুলেছে এক অসামান্য প্রাকৃতিক ওষুধে। এমনকি ইসলামের ধর্মে মহানবী (স:) বলেছেন ‘‘কালোজিরা মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের মহৌষধ।‘’
কালোজিরার উপকারিতাঃ সহজলভ্য এই মশলাটির কিছু উপকারী দিক সম্পর্কে জেনে নেই-
ঠান্ডা, জ্বর, গলা ব্যথা প্রতিরোধীঃ কালোজিরার সবচেয়ে প্রচলিত ব্যবহার হল ঠান্ডা, জ্বর, গলা ব্যথা ইত্যাদিতে কার্যকরী। কালোজিরা ভর্তা করে বা চায়ের সাথে খেলে ঠান্ডা কমে। তাছাড়া সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে থাকলে অল্প কিছু কালোজিরা একটি কাপড়ে পুঁটলি করে বেঁধে পুঁটলিটি হাত দিয়ে ঘষুন। এবার পুঁটলিটি কিছুক্ষ শুঁকলেই দেখবেন শ্বাস নেয়া সহজ হয়ে গেছে।
স্মৃতিশক্তি বাড়াতেঃ কালোজিরা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায়। প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম কালোজিরা দুবার করে খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়বে।
ঘুমের সমস্যা দূরঃ ঘুম না হওয়ার একটি বড় প্রতিষেধক হল কালোজিরা। কালোজিরা ভেজে গুঁড়ো করে পাকা কলার সাথে খেলে ঘুমের সমস্যা দূর হয়।
পরিপাক তন্ত্রের সুস্থতায়ঃ পরিপাক তন্ত্রের সুস্থতায় কালোজিরা অত্যন্ত কার্যকরী। এটি অগ্ন্যাশয়ের এনজাইমের কার্যকারিতা বাড়ায়, ফলে হজমে সাহায্য হয়। এটি আলসারের জন্য দায়ী Helicobacter pylori কে দমন করে এবং ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা, বদহজম, বমি বমি ভাব ইত্যাদি নিরাময় করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধকঃ কালোজিরাতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক উপাদান। এরা যকৃতকে বিষমুক্ত করে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে কোলন ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, ব্ল্যাড ক্যান্সার ইত্যাদি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনঃ কালোজিরা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন রাখে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে রক্তে ট্রাইগ্লিসারল (TG) এবং কোলেস্টেরলের পরিমান কমবে।
বিষন্নতা প্রতিরোধেঃ কালোজিরা বিষন্নতা প্রতিরোধে সহায়ক। এটি বিভিন্ন অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
এন্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহ বিরোধীঃ কালোজিরার প্রদাহ বিরোধী (Anti-inflammatory) ও জারণবিরোধী (Antioxidant) ধর্ম রয়েছে।
গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের এবং মায়ের স্বাস্থ্যঃ গর্ভাবস্থায় কালোজিরা বাচ্চার সঠিক বর্ধন নিশ্চিত করে। দুধের সাথে মধু ও কালোজিরা মিশিয়ে খেলে মায়ের বুকের দুধের পরিমান বাড়ে।
কিডনী সুরক্ষায়ঃ কিডনী সুরক্ষায় কালোজিরা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এটি কিডনিতে পাথরের চিকিৎসায় প্রচলিত।
ওজন নিয়ন্ত্রনঃ কালোজিরা স্থূল ব্যক্তির ওজন হ্রাসে সাহায্য করে। এতে পর্যাপ্ত পরিমানে আঁশ এবং উপকারী ফ্যাটি এসিড গুলো ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে।
দাঁতের স্বাস্থ্যেঃ দাঁতের স্বাস্থ্যেও কালোজিরার অনন্য অবদান রয়েছে। দিনে ২ বার কালোজিরা দাঁতে ঘষলে দাঁত ব্যথার উপশম হয়।
ত্বকের যত্নেঃ কালোজিরা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন: একজিমা, ব্রণ ইত্যাদি নিরাময় করে।
অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের রোগীর কালোজিরা উপকার করে।
কালোজিরা ইনসুলিন এর নি:সরন বাড়িয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন রাখে।
কালোজিরা দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থা জোরদার করে।
কালোজিরার গুণাগুণের কথা বলে শেষ করার মত নয়।সুতরাং খাবারের সাথে কালোজিরা যোগ করুন, সুস্থতা সুনিশ্চিত করুন। তবে যদি কারো কালোজিরা হজমে সমস্যা হয় তাহলে তার এটি বজর্ন করাই শ্রেয়।
ফাতিমা তাহসিন শাম্মী
খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান।
4,469 total views, 4 views today
Any opinion ..?