আপেল নাকি পেয়ারা
অনেকেই আমরা ভেবে থাকি যে বিদেশি যেকোন জিনিস তা ব্যবহারের পণ্য থেকে শুরু করে ফল,সবজি হোক তারমানেই বেশি ভালো। সব ক্ষেত্রে এই চিন্তা-ভাবনা সত্যি হবে তা কিন্তু মোটেই নয়।অনেক সময় স্বদেশীয় কিছুই হতে পারে বেশি কিছু।কথায় নয়,প্রমাণ সহ দেখা যাক-
প্রচলিত আছে, ফল খেলে বল বাড়ে। কিন্তু দেশীয় ফলের অসাধারণ সব গুণাগুণ আমাদের অনেকেরই অজানা। তেমনই একটি উপকারি দেশীয় ফল হল পেয়ারা। আজকাল প্রায় সারা বছরই চাষ হওয়ায় পেয়ারা আমাদের দেশে অত্যন্ত সহজলভ্য একটি ফল। ভিটামিন সি এর উৎস বলতে আমরা যে কয়টা ফল চিনি পেয়ারা তার মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট।
এবার এক নজরে দেখে নেয়া যাক দেশীয় ফল, পেয়ারার গুণাগুণ গুলো –
- আমাদের দেশের বিভিন্ন ফলের মধ্যে পেয়ারা ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ এর অতুলনীয় একটি উৎস। পেয়ারার ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- পেয়ারার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহ থেকে ফ্রি রেডিক্যাল দূর করতে সাহায্য করে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং প্রাক-ক্যান্সারের কোষ ও টিউমার কোষ রোধে সাহায্য করে। ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও পেয়ারা সাহায্য করে।
- পেয়ারায় চিনির পরিমান কম এবং খাদ্য আঁশের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- পেয়ারার যে শুধু ফলই উপকারি তা নয়। পেয়ারা পাতার উপকারিতাও কিছু কম নয়। পেয়ারা পাতা সেদ্ধ পানি দাঁতের ব্যাথা ও মুখের ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে। এছাড়া পেয়ারা পাতার রস হজমশক্তি বাড়ায়। পেয়ারা পাতার চা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
এবার আসি বিদেশি ফলের কথায়। আমাদের দেশের বাজারে প্রাপ্ত বিদেশি ফলের মধ্যে আপেল অন্যতম। আপেল নিয়ে প্রচলিত একটি প্রবাদ হল, “An apple a day keeps the doctor away”. অর্থাৎ প্রতিদিন একটি করে আাপেল শরীরকে সুস্থ রাখে। মৌসুমি জলবায়ুর দেশ হওয়ায় আামাদের দেশে আপেল চাষ না হলেও এখানকার মানুষের কাছে আপেল বেশ জনপ্রিয়। আপেলের রয়েছে নানা গুণ-
- আপেলে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে এবং স্নায়ুকোষের ক্ষয় রোধ করে।
- নিয়মিত আপেল খেলে খারাপ কোলেস্টেরল কমে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
- সবুজ আপেলে চিনি কম এবং আঁশের পরিমাণ বেশী থাকায়, *নিম্ন গ্লাইসেমিক খাদ্য(*গ্লাইসেমিক সূচক ৩৯) হওয়ায় ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য উপকারী ও স্থূলতার ঝুঁকি কমায়।
এখন দেখে নেওয়া যাক এত উপকারি ফল দুটির তুলনামূলক পুষ্টিগুণ-
ছকঃ ১০০ গ্রাম পেয়ারা এবং আপেলের পুষ্টি উপাদানের পরিমান
পুষ্টিউপাদান | পেয়ারা(গ্রাম) | আপেল(গ্রাম) |
ক্যালরি | ৬৮ কিলোক্যালরি | ৫২ কিলোক্যালরি |
কার্বহাইড্রেট
চিনি খাদ্যআঁশ |
১৪.৩২ ৮.৯২ গ্রাম
৫.৪ গ্রাম |
১৩.৮১ গ্রাম
১০.৩৯ গ্রাম ২.৪ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.৯৫ গ্রাম | ০.১৭ গ্রাম |
প্রোটিন | ২.৫৫ গ্রাম | ০.২৬ গ্রাম |
ভিটামিন এ
(বিটা ক্যারোটিন) |
৩৭৪ মাইক্রোগ্রাম | ২৭ মাইক্রোগ্রাম |
থায়ামিন | ০.০৬৭ মিলিগ্রাম | ০.০১৭ মিলিগ্রাম |
রিবোফ্লাভিন | ০.০৪ মিলিগ্রাম | ০.০২৬ মিলিগ্রাম |
নায়াসিন | ১.০৮৪ মিলিগ্রাম | ০.০৯১ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন সি | ২২৮.৩ মিলিগ্রাম | ৪.৬ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন কে | ২.২ মাইক্রোগ্রাম | ২.২ মাইক্রোগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ১৮ মিলিগ্রাম | ৬ মিলিগ্রাম |
লৌহ | ০.২৬ মিলিগ্রাম | ০.১২ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ২২ মিলিগ্রাম | ০.০৩৫ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ৪০ মিলিগ্রাম | ১১ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ৪১৭ মিলিগ্রাম | ১০৭ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ২ মিলিগ্রাম | ১ মিলিগ্রাম |
জিংক | ০.২৩ মিলিগ্রাম | ০.০৪ মিলিগ্রাম |
উপরের ছকটি লক্ষ্য করলে দেখা যায় আপেলের তুলনায় পেয়ারায় ভিটামিন ও মিনারেলসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান অনেক বেশি। আবার দেশি ফল হওয়ায় এটি দামেও বেশ সাশ্রয়ী।
অন্যদিকে, আপেল আমাদের দেশীয় ফল না হওয়ায় রপ্তানীর সময় আপেলের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রঙ ব্যবহার
করা হয় বিক্রির জন্য। এছাড়াও পচন রোধ করার জন্য আপেলের মধ্যে রাসায়নিক দ্রব্য, মোমের প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে যার ফলে আপেলের প্রাকৃতিক পুষ্টিগুন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রপ্তানীকৃত পণ্য হওয়ায় আপেলের বাজারদর দেশীয় ফলের তুলনায় বেশি।
অতএব দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদা পূরণে আপেল বেশি ভাল, নাকি পেয়ারা- সিদ্ধান্ত আপনার।
*গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বা গ্লাইসেমিক সূচক হলো যেকোন খাবারে প্রাকৃতিক ভাবে যে চিনি রয়েছে, তা খাওয়ার পরে রক্তে চিনির পরিমান কত দ্রুত বা ধীরে বৃদ্ধি করে তার পরিমাণ সূচকের মাধ্যমে নির্দেশ করে।এটি তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়, নিম্ন গ্লাইসেমিক সূচক বিশিষ্ট খাদ্য ( ৫৫ এর নীচে), মধ্যম গ্লাইসেমিক সূচক বিশিষ্ট খাদ্য (৫৫ থেকে ৬৯ এর মধ্যে), উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচক বিশিষ্ট খাদ্ য(৭০ থেকে ১০০ এর মধ্যে)। উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচক বিশিষ্ট খাদ্য রক্তে চিনির পরিমান দ্রুত বাড়ায় এবং নিম্ন গ্লাইসেমিক সূচক বিশিষ্ট খাদ্য চিনির পরিমান ধীরে ধীরে বাড়ায়।
লেখক–
তাহসিনুল মোবাশ্বেরা
খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ।
সম্পাদনায়–
তামান্না তাহসিন আহমেদ
শাহরুখ নাজ রহমান
খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ।
5,315 total views, 2 views today
Any opinion ..?