কৈশোরকালীন বিকাশের সময় অনেক প্রয়োজনীয় ফ্যাকটরগুলোর মধ্যে পুষ্টি অন্যতম অর্থাৎ কিশোর -কিশোরীদের দৈহিক ও মানসিকতা বিকাশের জন্য সঠিক পুষ্টিও গুরুত্বপূর্ণ। কৈশোরকালীন সময়ে শারিরীক এবং মানসিক উভয় ধরণের পরিবর্তন হয়, সাথে হয় অভ্যন্তরীণ বায়োলজিকাল পরিবর্তন। পর্যাপ্ত কিন্তু ব্যালান্সড স্বাস্থ্যকর খাদ্য বড় হবার প্রতিটি পর্যায়ের ( নবজাতকাল, শিশুকাল এবং কৈশোরকাল) জন্য অনেক প্রয়োজনীয়। ছেলেদের বৃদ্ধি সময়ে এখন পেশি তৈরির বদলে শরীরে ফ্যাট জমছে, দাড়ি-গোঁফ কম হচ্ছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে অনেক অল্প বয়সে মেয়েদের ক্ষেত্রে অনেক অল্প বয়সে ঋতুস্রাব হচ্ছে এবং কখনো অনেক বেশি ঘন ঘন, কখনো অনিয়মিত। গবেষণায় দেখা গেছে, কৈশোরে অতিরিক্ত ওজনের কারনে ছোট ছোট মেয়ে শিশুদেরও আজকাল ঋতুস্রাব হয় এবং অতিরিক্ত ওজন ছেলেদের বয়ঃসন্ধিকে দেরি এবং অসম্পুর্ন করিয়ে দেয়।
এসবই হচ্ছে বেশি পরিমানে প্রসেসড খাবার খেয়ে। রেডিমেড খাবারে অতিরিক্ত তেল, লবন, চিনি, টেস্টিং সল্ট ( মনোসোডিয়ামগ্লুটামেট), বিভিন্ন প্রিজারভেটিভ থাকে যা শিশু- কিশোরদের বর্ধনশীল বয়সে অনেক অস্বাভাবিক পরিবর্তন আনে। অস্বাভাবিক পরিবর্তন বলতে বোঝায় অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, মানসিক স্থুলতা, কোন কাজে আগ্রহ বোধ না করা ইত্যাদি।
তাহলে আমরা বলতে পারি যে, কৈশোরকালীন সঠিক বর্ধনে পুষ্টি ব্যাপক ভূমিকা রাখে। অপরদিকে বয়ঃসন্ধি সবধরনের বৃদ্ধির গতিকেই অনেক বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানগুলোর চাহিদা তৈরি হয়। কার্বহাইড্রেড (ভাত, রুটি, চিড়া, গুড়, চিনি)অর্থাৎ যেগুলো কিনা শক্তি দেয় , প্রোটিন (মাছ, মাংস,ডিম,দুধ, ডাল, সিমের বিচি, মটরসুটি) যারা শরীরের বৃদ্ধি এবং ক্ষয় পূরন করে, ফ্যাট(তেল,চর্বি , বাটার,মেয়োনিজ) যা কিনা সঞ্চিত শক্তির উৎস, ত্বকের সুরক্ষা দেয় এবং ফ্যাটে দ্রবনীয় ভিটামিনগুলোর শোষনে সাহায্য করে।
এই ম্যাক্রো পুষ্টি উপাদানগুলো কৈশোরে যেমন প্রয়োজনীয়;
তেমনিভাবে মাইক্রো পুষ্টি উপাদান- ভিটামিন( A,B,C,D,E,K এবং ফলিক এসিড) ও খনিজ লবন( ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়োডিন ইত্যাদি) এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
এই ক্রিটিকাল রেপিড গ্রোথ পিরিয়ডে ক্যলরি, প্রোটিন, আয়রন বা লৌহ,ক্যালসিয়াম, জিংক এবং ফোলেট এর নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ সরবরাহ থাকতে হবে।ডায়েট অর্থ কম খাওয়া নয় বরং নিয়ম মেনে পরিমিত কিন্তু পর্যাপ্ত খাওয়াই হলো ডায়েট।
ওজন এবং উচচতা অনুযায়ী ডায়েট আলাদা হয়, তাই এ ব্যাপারে অবশ্যই শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে (পুষ্টিবার্তা ওয়েবসাইট থেকেই নিতে পারেন) এবং নিয়মিত মানতে হবে।
আশা করছি এই লেখাটি অভিভাবকগণকে এবং সেইসাথে যাদের জন্য এতো কথা বলা – সেই দুরন্ত কিশোর কিশোরীদের কিছুটা কাজে লাগবে।
লেখাঃ
পুষ্টিবিদ শামীমা অরিন ঐশী।
4,037 total views, 2 views today
Any opinion ..?