বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে টমেটো একটি ফল হলেও সারা বিশ্বে সবজি হিসেবে পরিচিত।সবজি হিসেবে রান্নায় কিংবা সালাদের অন্যতম উপাদান হিসেবে ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ টমেটোর বেশ চাহিদা রয়েছে।জনপ্রিয় এই সবজিটিতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ,ক্যালসিয়াম,ভিটামিন–এ এবং ভিটামিন–সি রয়েছে।আকর্ষণীয়, সুস্বাদু, উচ্চ পুষ্টিমান এবং বহুবিধ উপায়ে ব্যবহারযোগ্যতার কারণে টমেটো সর্বত্রই জনপ্রিয়।সবজি হলেও টমেটোর মধ্যে ফলের সমুদয় গুণ বিদ্যমান এবং ফলের ন্যায় রান্না না করেও খাওয়া যায়।বাংলাদেশে এটি বিলাতী বেগুন নামে পরিচিত।এটি আমাদের দেশের একটি প্রধান শীতকালীন সবজি,তবে গ্রীষ্মকালেও টমেটো সাফল্যের সাথে চাষ করা যায়।
রোগ প্রতিকারে টমেটোঃ
১. সর্দি-কাশি প্রতিরোধে টমেটো বেশ কার্যকর। সর্দি-কাশি হলে এক বা দুটি টমেটো নিয়ে স্লাইস করে অল্প চিনি বা অল্প লবণ দিয়ে পাত্রে গরম করে স্যুপ তৈরি করে খেতে পারেন। এর ফলে সর্দি-কাশিতে উপকার পাবেন।
২. জ্বর নিরাময়ে সহায়ক। গায়ের তাপমাত্রা নানান কারণে বাড়তে পারে। সামান্য জ্বর হলে টমেটো খেলেই আরাম পাওয়া যায়।
৩. টমেটো ন্যাচারাল এ্যান্টিসেপ্টিক,যা ইনফেকশন রোধ করে।
৪. বিশেষ কয়েক ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে টমেটো।এর মধ্যে পাকস্থলী,কোলোরেক্টাল এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার অন্যতম।
টমেটোর উপকারিতাঃ
১. ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে টমেটো বেশ উপকারী।
২. টমেটোতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন-এ, যা আমাদের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
৩. টমেটোতে থাকা ভিটামিন-কে মজবুত হাড় গঠনে সহায়তা করে।
৪. ধূমপান ছাড়তে সহায়ক ভূমিকা পালনের পাশাপাশি সৃষ্ট ক্ষতি পুষিয়ে নিতেও টমেটো কার্যকরী।
৫. কিডনিকে সুস্থ-সবল রাখতে টমেটোর ভূমিকা রয়েছে।
৬. টমেটো শরীরে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে যা শরীরের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
৭. ত্বকের জন্য টমেটো বিশেষভাবে উপকারী।
৮. ভিটামিন-সি এর অভাবে মাড়ি থেকে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে টমেটো সহায়ক ভূমিকা রাখে। টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে। তাই প্রতিদিন একটি করে টমেটো খেলে মাড়ি থেকে যদি রক্তপাত হয়ে থাকে তবে উপকার পাওয়া যাবে।
কাঁচা বা রান্না,কোনটি বেশি উপকারী?
কাঁচা এবং রান্না করা টমেটোর মধ্যে কোনটি বেশি স্বাস্থ্যকর?
পুষ্টি ও গুণের কথা বিচার করলে কাঁচা সবজি বা সতেজ ফলেরই পাল্লা ভারী। কারণ, রান্না করলে অনেক সময় ভিটামিন ও খনিজের পরিমাণ কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে বিষয়টি সত্যি হলেও টমেটোর ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম রয়েছে। টমেটো লাল হওয়ার পেছনে যে লাল রঙের পিগমেন্ট থাকে, তার নাম লাইকোপেন। এই লাইকোপেন ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে। এমনকি হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতেও এটি উপকারী। টমেটো রান্না করে খেলে এই লাইকোপেনের ঘনত্ব আরও বাড়ে। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষকেরা বলেন, এক টুকরো কাঁচা টমেটোতে ৫১৫ মাইক্রোগ্রাম লাইকোপেন থাকে আর দুই চা–চামচ টমেটো ক্বাথে ১৩ হাজার ৮০০ মাইক্রোগ্রাম লাইকোপেন থাকতে পারে। অর্থাৎ, টমেটো রান্না করে খেলে বেশি লাইকোপেন পাওয়া যায়।
তাই টমেটো থেকে অধিক স্বাস্থ্যকর উপাদান পেতে সস, ক্বাথ, সরুয়া ও রোস্ট বানিয়ে খেতে পারেন।
খাদ্য উপাদানঃ
টমেটোতে রয়েছে ভিটামিন-সি,ভিটামিন-এ,ভিটামিন-কে,ফলিক এসিড,লাইকোপেন,ক্রোমিয়াম ও গুরুত্বপূর্ণ আরো অনেক ভিটামিন সমূহ।
লাল টমেটো,কাঁচা অবস্থায়
প্রতি ১০০ গ্রাম(৩.৫ আউন্স) এর পুষ্টিগত মানঃ
প্রধান খাদ্য উপাদান | উপাদান | পরিমাণ |
শক্তি | – | ৭৪ কিলো ক্যালরি |
শর্করা | চিনি | ২.৬ গ্রাম |
খাদ্যের ফাইবার | ১.২ গ্রাম | |
স্নেহ পদার্থ | – | ০.২ গ্রাম |
প্রোটিন | – | ০.৯ গ্রাম |
ভিটামিন | ভিটামিন-এ | ৪২ মাইক্রো গ্রাম(৫%) |
বিটা ক্যারোটিন | ৪৯ মাইক্রো গ্রাম(৪%) | |
লুটিন জিজানথেন | ১২৩ মাইক্রো গ্রাম | |
থায়ামিন(বি১) | ০.০৩৭ মিলি গ্রাম(৩%) | |
নায়াসিন(বি৩) | ০.০৫৯৪ মিলি গ্রাম(৪%) | |
ভিটামিন বি৬ | ০.০৮ মিলি গ্রাম (৬%) | |
ভিটামিন-সি | ১৪ মিলি গ্রাম (১৭%) | |
ভিটামিন-ই | ০.৫৪ মিলি গ্রাম (৪%) | |
ভিটামিন-কে | ৭.৯ মাইক্রো গ্রাম (৪%) | |
খনিজ | ম্যাগনেসিয়াম | ১১ মিলি গ্রাম (৩%) |
ম্যাঙ্গানিজ | ০১১৪ মিলি গ্রাম (৫%) | |
ফসফরাস | ২৪ মিলি গ্রাম (৩%) | |
পটাশিয়াম | ২৩৭ মিলি গ্রাম (৫%) | |
অন্যান্য উপাদান | পানি | ৯৪.৫ গ্রাম |
লাইকোপেন | ২৫৭৩ মাইক্রো গ্রাম |
তাই সকলের উচিত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদানে সমৃদ্ধ টমেটো নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখা।
লেখাঃ হাবীবা ফারহানা, খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান।
সম্পাদনাঃ আল আসমাউল হুসনা, খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান।
1,778 total views, 2 views today
Any opinion ..?