আপনার কাচ্চি পছন্দ, বিরিয়ানিও পছন্দ কিন্তু সাথে আলু খাবেন না, তা তো হবে না মশাই। আলু ছাড়া যে কাচ্চি, বিরিয়ানি অচল। শুধু এসব রাজকীয় খাবারই নয়,আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় প্রতিনিয়তই আমরা যে সবজিটি ব্যবহার করি সেটি হলো আলু। সারাবছর পাওয়া যায়, দামে সস্তা এবং নানা উপায়ে খাওয়া যায় বলে আলুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। U.S. Department of Agriculture এর মতে বিশ্বের প্রধানতম ফসলগুলোর মাঝে ধান, গম ও ভূট্টার পরেই আলুর স্থান। আলু মানেই শুধু কার্বোহাইড্রেট আর অতিরিক্ত ক্যালরি—তা নয়। আলু প্রচুর পুষ্টিগুন সম্পন্ন। আলুতে বিদ্যমান ফাইবার,ভিটামিন ও মিনারেলস শরীরকে সুস্থ রাখে এবং নানা রোগ প্রতিরোধ করে। এর বাইরেও আলুর আরো অনেক খাদ্যগুন রয়েছে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে আলুর ভূমিকা অপরিসীম। USDA অনুসারে, প্রতি ১০০ গ্রাম আলুতে ৪২১ মিগ্রা পটাশিয়াম রয়েছে। তাই, প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় এটি শরীরের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে দারুণভাবে সাহায্য করে। আলুর মধ্যে থাকা ফাইবার খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। তবে মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত আলু খেলে রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ওজনও বেড়ে
যেতে পারে।
মানসিক চাপ কমায়: আলুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-৬ রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড সেন্টারের গবেষণা হতে জানা যায়, ভিটামিন বি-৬ সেরেটোনিন ও ডোপামিন নামক নিওরোট্রান্সমিটার গঠনে সহায়তা করে। নিওরোট্রান্সমিটার মস্তিষ্কে অনুভূতি আদান প্রদান করে থাকে এবং মানসিক চাপ, হতাশা কমিয়ে মন ভালো করতে সহায়তা করে। এছাড়াও Attention Deficit Hyperactivity Disorder (ADHD) প্রতিরোধেও কার্যকর।
মস্তিষ্ক সচল ও কর্মক্ষম রাখে: আলুতে গ্লুকোজ, অক্সিজেন, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, অ্যামিনো এসিড, ওমেগা-৩ ও অন্যান্য ফ্যাটি এসিড আছে, যা মস্তিষ্ক সচল ও কর্মক্ষম রাখার জন্য প্রয়োজনীয়
উপাদানগুলো সরবরাহ করতে সহায়তা করে।
হজমে সহায়ক: হজমের পক্ষে আলু খুব ভালো। কারণ আলুতে হাই ফাইভার থাকে। পেটে ব্যথা, হজমের গোলমাল কমাতে আলু খুব উপকারী। যাদের হজমের সমস্যা বা খাবার সহজে হজম হয় না,তাদের জন্য আলু অত্যন্ত উপকারী।
ত্বকের পক্ষে উপকারী: আলু বেটে কিংবা আলুর রস ত্বকে লাগালে বিভিন্ন দাগ, র্যাশ ও অন্যান্য ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আলুতে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-৬, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক,
ফসফরাস ইত্যাদি রয়েছে যা ত্বকের জন্য জরুরি। এছাড়া রোদে পোড়া ভাবও দূর করতে সহায়তা করে আলুর রস।
রোগ প্রতিরোধ: আলুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে যা এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আলু থেকে ভিটামিন সি পাতা হলে নতুন আলু ভালমত পরিষ্কার করে খোসাসহ রান্না করতে হবে।
প্রাকৃতিকভাবে গ্লুটেন ফ্রি: যাদের সিলিয়াক ডিজিজ রয়েছে তারা গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবার খেলে পেটে ব্যাথা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, র্যাশসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাদের জন্য আলু স্বভাবত গ্লুটেন ফ্রি শর্করা জাতীয় খাদ্যের একটি উত্তম উৎস।
এ্যাথলেটিক পারফোর্মেন্স: আলু থেকে প্রাপ্ত শক্তি গ্লাইকোজেন হিসেবে মাংসপেশি ও লিভারে সঞ্চিত থাকে। তাই শারীরিক ব্যায়ামের ক্ষেত্রে বিশেষ করে খেলোয়াড়দের জন্য আলু একটি অন্যতম খাদ্য।
এছাড়াও আলু ইলেক্ট্রোলাইটিক ব্যালেন্স ঠিক রাখতে সহায়তা করে। খেলোয়াড়দের শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে অতি গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্ট্রোলাইট পটাশিয়াম ও সোডিয়াম বের হয়ে যায় যা আলুর খোসার
মাধ্যমে পূরন করা সম্ভব।
আলু পছন্দ করেন না, এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। তবে মাত্রাতিরিক্ত আলু খাওয়াও স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো না। খাদ্যতালিকায় প্রথম থেকেই যদি পরিমিতভাবে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের সাথে আলু খাওয়া যায়, তাহলে আলুর সবরকম উপকারিতা পাওয়া সম্ভব। এতে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে এবং সুস্থও থাকবে।
লেখিকাঃ
স্বর্ণালী দাশ(বিজয়া)
খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ
সম্পাদনাঃ
জান্নাতুল তাবাসসুম
খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ
3,431 total views, 2 views today
Any opinion ..?