আমাদের প্রথম মৌলিক চাহিদা হল খাদ্য। এ পৃথিবীর সকল মানুষের জন্মগত অধিকার খাদ্যের অধিকার। অথচ এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি মানুষ বঞ্চিত হয় পর্যাপ্ত পরিমাণের পুষ্টিকর
খাদ্য থেকে। প্রায় ১৪ কোটি মানুষ প্রতিনিয়ত কষ্ট পায় তীব্র ক্ষুধায়। খাদ্য অপচয় আমাদের বর্তমান জীবনের একটি গুরুতর সমস্যা। বিশ্বে যতখানি খাদ্য উৎপন্ন হয় তার অর্ধেক থেকে এক তৃতীয়াংশ খাদ্য অপচয় হয় নানাভাবে।
খাদ্যের এই অপচয় ঘটে খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে পরিবহন পর্যন্ত নানা ধাপে এমনকি ভোক্তা অর্থাৎ আমাদের হাতে আসার পরও অপচয় হয় খাদ্যের।
খাদ্যের অপচয় রোধ করা গেলে এই কোটি কোটি মানুষের মুখে তুলে দেওয়া যেত খাদ্য। এছাড়াও খাদ্য অপচয় রোধ করে আমরা যেমন নিজেদের অর্থ সাশ্রয় করতে পারি ঠিক সেভাবে কৃষিখাতে ব্যয়কৃত দেশের অর্থ সাশ্রয় করতেও সাহায্য করতে পারি।
খাদ্য অপচয়ের ফলে পরিবেশ দূষণও ঘটে থাকে। খাদ্য অপচয় রোধের মাধ্যমে আমরা রোধ করতে পারতে পরিবেশ দূষণ।
খাদ্য অপচয় রোধে কাজ করতে পারি আমরা সকলে। এক্ষেত্রে আমরা যা করতে পারি তা হল –
১। খাওয়ার শুরুতে প্লেটে সবসময় স্বল্প পরিমাণে খাদ্য নিন। শুরুতে অধিক পরিমাণে খাদ্য নিলে বেশির ভাগ সময়ই তা অপচয় হয়। তাই অপচয় রোধে শুরুতে অল্প খাদ্য নিন এবং পরবর্তীতে চাহিদা বুঝে বাড়তি খাদ্য নিন। রেস্টুরেন্টে বা কোন অনুষ্ঠানে খেতে গেলেও এটি মেনে চলুন।
২। একদিনের বেঁচে যাওয়া খাদ্য ফেলে না দিয়ে তা পুনর্বার ব্যবহার করুন। তা পুনঃরায় গরম করে গ্রহণ করুন অথবা পরবর্তী বেলার খাবারের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করুন৷ এক্ষেত্রে অবশ্যই খাবার তৈরির ২ ঘন্টা পর বেঁচে যাওয়া খাবারটুকু ফ্রিজে ভালো ভাবে সংরক্ষণ করুন।
৩। বাজার করার ব্যাপারে সচেতন হোন – প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাজার না করে যতটুকু দরকার ঠিক ততটাই কিনুন। এতে করে ব্যবহারের পূর্বেই খাবার নষ্ট না মেয়াদোত্তীর্ণ হবার আশঙ্কা থাকবে না।
৪। আপনার ফ্রিজের ব্যাপারে সচেতন হোন – খেয়াল রাখবেন ফ্রিজে সংরক্ষিত খাবার যেনো সঠিক তাপমাত্রার (১-৫° সেলসিয়াস) এর ভিতরে রাখা হয়। এছাড়া খাবারের প্যাকেটে প্রদত্ত ও ফ্রিজের ম্যানুয়াল পড়ে খাবার সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করুন। অবশ্যই মাথায় রাখবেন ফ্রিজ যেনো ওভারলোড না হয়ে যায়।
৫। FIFO পদ্ধতি অনুসরণ করুন – FIFO বা First In First Out পদ্ধতি মেনে চলুন। অর্থাৎ, যে খাবারটি আগে কিনবেন বা সংরক্ষণ করবেন তা আগে ব্যবহার করুন। নতুন কিনে আনা খাবারটি পরে ব্যবহার করুন।
৭। খাবারকে সার এ পরিণত করুন – যদি খাবার অপচয় হয়েই যায় তবে তা ফেলে না দিয়ে বাগানে সার হিসেবে ব্যবহার করুন। এগুলো প্রাকৃতিক সার হিসেবে দারুণ কাজ করে। বিশেষ করে সবজির খোসা এক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত উপাদান।
৮। ভাগ করাতেই আনন্দ! আপনার বেঁচে যাওয়া খাবার ফেলে না দিয়ে কোন ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে দান করুন। এতে করে আপনার খাদ্য অপচয় রোধ হবে এবং একজন অনাহারী ব্যক্তির খাবারের যোগান হবে।
লেখক- সৃজনী মণ্ডল ও
জিনাতুল জাহরা ঐশী
সম্পাদক- জান্নাতুল তাবাসসুম
2,921 total views, 2 views today
Any opinion ..?