Black Cardamom খুব পরিচিত একটি ভারতীয় মশলা যাকে সাধারনত বড় এলাচ বা
কালো এলাচও বলা হয় যদিও বিভিন্ন দেশে এর ভিন্ন ধরনের নাম রয়েছে। এটি মশলার
রানী নামে বিখ্যাত। এশিয়া মহাদেশে বড় এলাচ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
বড় বা কালো এলাচের বৈজ্ঞানিক নাম Amomum subulatum. এটি Zingiberaceae
গোত্রের সদস্য। এটি দেখতে প্রায় ১ ইঞ্চির মতো লম্বা। এর খোসা রুক্ষ,শুকনা, ভাঁজযুক্ত ত্বকবিশিষ্ট
ও গাঢ় বাদামি থেকে কালো বর্নের হয়ে থাকে। খোসার ভিতরে ২০-৩০টির মতো ছোট আঠালো
গাঢ় রঙের বীজ দেখা যায়। এর এক ধরনের তাজা,কড়া এবং সুগন্ধি ঘ্রান রয়েছে। তবে
কিছুটা কর্পূরের মতো গন্ধও পাওয়া যায়।
এলাচের বীজে ৩% ইসেনশিয়াল অয়েল রয়েছে যার মধ্যে ৭০% এরও বেশি ১,৮-সিনিওল
রয়েছে। অল্প পরিমানে লিমোনিন, টারপিনিন, টারপিনিওল,টারপিনাইল অ্যাসিটেট এবং
সাবিনিন রয়েছে বলে জানা যায়।
দৈনন্দিন খাবার রান্নায় সাধারণত ছোট এলাচগুলো ব্যবহার করা হয়। স্মোকি,
তীব্র,ঝাঁঝালো ঘ্রান আনার জন্য বড় এলাচের ব্যবহার রয়েছে।।সাধারণত এলাচের বীজগুলো
যেন বের না হয়ে যায় সেভাবে হালকা চূর্ণ করে খাবারে দেওয়া হয়। সাধারনত বিরিয়ানিতে,ঝাল
মাংসে,ডালে এর কড়া স্বাদ সৃষ্টির জন্য বড় এলাচ দেওয়া হয়। এছাড়াও যে শরীরের
জন্য এটি খুবই উপকারি তা কি আমরা জানি?
আসুন জেনে নেই কালো বা বড় এলাচ আমাদের কিভাবে সাহায্য করে-
কখনো কি ভেবেছেন, রাতের খাবারের পরে ডেজার্টে কেন এলাচ ব্যবহার করা
হয়? এর কারন এলাচ বায়ুরোধ করে এবং গ্যাস্ট্রিক ও অন্ত্রের গ্রন্থিগুলোকে
উদ্দীপিত করে হজমের গতি বাড়িয়ে দেয়। এটি পাকস্থলী প্রাচীরের জ্বালা পোড়া
কমায়, এসিড রিফ্ল্যাক্স ও অসুস্থতার সাথে লড়াইও করে। এমনকি আলসার
নিরাময়েও সাহায্য করে। এর আরো একটি গুণ হলো মিউকাস স্তরকে মসৃণ করা,
অ্যাসিডিটিকে কমিয়ে পাকস্থলীর কার্যকারিতাকে বৃদ্ধি করা।
খাওয়ার পর পেটে গ্যাস অথবা পেট ফুলে গেলে – কয়েকটি বড় এলাচ,অল্প
পরিমানে আদা,২-৩ টি লবঙ্গ এবং কিছু ধনে বীজ নিয়ে একসাথে ভালো করে
গুড়া করে গরম পানির সাথে খেয়ে ফেললে উপকার পাবেন।
মুখে দুর্গন্ধের সমস্যা সমাধানে কালো এলাচের কোন জুড়ি নেই। এটি দাঁত ও
মাড়ির যেকোন সমস্যা যেমন ক্যাভিটি, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, ইনফেকশন ইত্যাদি
সমাধানে সাহায্য করে। বড় এলাচ চিবিয়ে খেলে দাঁতের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া
যাবে।
বড় এলাচ অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদানে পূর্ণ ও নিজেও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টরূপে
কাজ করে। তাছাড়া এতে ভিটামিন সি রয়েছে যা শরীরকে টক্সিক উপাদান থেকে
রক্ষা করে ও রক্ত সঞ্চালনকে উন্নত করে।
অ্যাজমা রোগীদের ক্ষেত্রে এবং শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় বড় এলাচ খেলে অনেক
উপকার পাওয়া যায়। শ্বাস নালীর মাধ্যমে মিউকাসের প্রবাহকে স্বাভাবিক করে
সর্দি,কাশি,গলা ব্যাথা থেকে রেহাই দিতে পারে। এক্ষেত্র, Kadha নামক একটি
আয়ুর্বেদিক ইমিউন বুস্টিং পানীয় রয়েছে যা লক্ষন উপশমে অনেক সাহায্য করবে।
তৈরির পদ্ধতি- একটি প্যানে ২টি লবঙ্গ ও ৪-৫ টি বড় এলাচ নিয়ে ২ মিনিটের
জন্য ভাজতে হবে। ভাজা হয়ে গেলে ৩-৪ কাপ পানি ঢেলে দিতে হবে।
১টেবিলচামচ কুচি করা আদা যোগ করে মিশ্রনটিকে ফুটাতে হবে। ৫-৬ টি
তুলসী পাতা মিশ্রনে দিয়ে ৪-৫ মিনিটের জন্য অল্প আঁচে জ্বাল দিতে হবে। পানি
যখন অর্ধেক হয়ে আসবে তখন চুলা থেকে নামিয়ে ছেঁকে নিতে হবে।
ক্ষুদ্র কিন্তু শক্তিশালী এই কালো বীজ শ্বাসনালীকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে।
এটি ফুসফুসের মাধ্যমে সহজে বায়ু প্রবেশকে নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
বড় এলাচ হৃদযন্ত্রের অসুখ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি কার্ডিয়াক ছন্দ নিয়ন্ত্রণ
করে রক্তচাপের ভারসাম্য বজায় রাখে ও রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা হ্রাস করে।
চোখের পাতার প্রদাহ কমাতে এটি ব্যবহৃত হয়।
বড় এলাচ শুধু রান্না করা খাবারের জন্যই দরকার নয়, বরং শরীরের বেশ উপকার
সাধনও করে থাকে। প্রায় সব মশলাই এরকম প্রাকৃতিক প্রতিষেধক লুকিয়ে আছে।
সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে ওষুধের উপর আমাদের নির্ভরশীলতা কমে যাবে।
লেখক –
জান্নাতুল তাবাসসুম
খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ
সম্পাদক –
হুমায়রা নাজনীন
খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ
3,790 total views, 4 views today
Any opinion ..?