ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য চাহিদা আর দশজন সাধারন ব্যাক্তির মতই,আলাদা ভাবে বিশেষ কোনো খাবারের প্রয়োজন নেই, প্রইয়োজন শুধু সঠিক খাদ্য নির্বাচন। না খেয়ে বা কম খেয়ে থাকা নয়, বরং পুষ্টিকর সুষম খাবার গ্রহণই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস পথ্য ব্যাবস্থাপনার ভিত্তি হলো তিন বেলা নির্দিষ্ট সময়ে খাদ্য গ্রহণ। নির্দিষ্ট সময়ে খাবার গ্রহনে শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে। তাই কি খাবেন,কতটুকু খাবেন এবং কখন খাবেন; রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রনে প্রতিটি বিষয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন সাধারন মানুষের জন্য একটি ডায়েটারি গাইডলাইন সুপারিশ করে যা মূলত ফলমূল, শাকসবজি, শস্যদানা, ও কম চর্বিযুক্ত ডেইরি খাবার কেন্দ্রিক।
সঠিক খাবার নির্বাচনঃ
শর্করা
রক্তের শর্করার মাত্রার ওপর শর্করা জাতীয় খাবারের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি । তাই বলে শর্করা বাদ দেয়া যাবে না বরং সঠিক ধরনের শর্করা নির্বাচন করতে হবে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির দৈনিক গ্রহণকৃত মোট ক্যালরির ৪৫ থেকে ৫৫ শতাংশ শর্করা থাকে। প্রতি গ্রাম শাকসবজি, ফলমূল ও শস্যদানায় রিফাইন্ড বা পরিশোধিত শর্করা থেকে বেশি পুষ্টি ও উন্নত খাদ্যআঁশ থাকে। উচ্চ আঁশ যুক্ত খাবার আমাদের শরীরে ধীরে ধীরে হজম হয় যার ফলে রক্তের শর্করা হঠাত করে খুব বেশি বৃদ্ধি পায় না। সাদা ভাত, রুটি, পাস্তার পাশাপাশি ক্যান্ডি, কোমল পানীয় ও মিষ্টি ইত্যাদি পরিশোধিত শর্করা গুলো এড়িয়ে চলতে হবে। পরিবর্তে ঢেঁকিছাটা কিংবা স্বল্প পরিশোধিত লাল চাল এবং লাল আটা ব্যবহার করতে হবে। কারন পরিশোধিত শর্করা
রক্তে চিনির স্পাইক তৈরি করে এবং রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ফাইবার
খাদ্যআঁশ বা ফাইবার খাদ্যের হজম প্রক্রিয়া এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফাইবার দুটি রূপের পাওয়া যায়:
১. দ্রবণীয় ফাইবার; যা মটরশুটি, শুকনো মটর, ওটস, এবং ফলমূলে পাওয়া যায়।
২. অদ্রবণীয় ফাইবার; যা শস্যদানা তে পাওয়া যায়।
এদের মধ্যে দ্রবণীয় ফাইবার শরীরে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এতে করে ঔষধ এর ওপর নির্ভরশীলতা কমে। এছাড়া বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবার গ্রহণে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
আমিষ
খাদ্য তালিকায় উচ্চ মানসম্পন্ন প্রোটিন যেমনঃ ডিম, দুধ, টক দই, মাছ, চর্বি ছাড়া মাংস, বীজ জাতীয় সবজি রাখতে হবে।
স্নেহ
স্নেহ জাতীয় খাবার হজম প্রক্রিয়াকে মন্থর করে, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। তাই বলে অধিক মাত্রায় চর্বিযুক্ত খারাব খাওয়া যাবে না। পরিমিত পরিমানে উপকারী চর্বি বা গুড ফ্যাট গ্রহণ করতে হবে। যেমনঃ বাদাম, বীজ, সামুদ্রিক মাছ,দই, পিনাট বাতার, তিসি ইত্যাদি।
খাবারের পরিমান নির্ধারণঃ
কতটুকু খাবার খাওয়া হবে তা নির্ধারণের বেশ কিছু পদ্ধতি আছে, তার মধ্যে প্লেট পদ্ধতি সবচেয়ে সহজবোধ্য ও কার্যকর। দুপুর কিংবা রাতের খাবার এই পদ্ধতিতে পরিমাপ করা যায়।
একটি ৯ ইঞ্চি প্লেট নিন, প্লেটের অর্ধেকে শ্বেতসার বিহীন শাকসব্জি, এক-চতুর্থাংশে মাছ, মাংস কিংবা অন্য প্রোটিন জাতীয় খাবার এবং শেষ এক-চতুর্থাংশে শস্য জাতীয় খাবার (ভাত, রুটি) কিংবা শ্বেতসার যুক্ত সবজি দিয়ে পূর্ণ করুন। এর সাথে খেতে পারেন একটা ফল কিংবা এক গ্লাস দুধ ।
লেখায়: তানজিন নাহার তুলি
খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগ
সম্পাদনায়: হুমায়ারা নাজনীন তামান্না
খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগ
326 total views, 2 views today
Any opinion ..?